বিজেপির নবান্ন অভিযানের কারণ কী, কী ঘটল সারাদিনে, এর প্রভাবই বা কী হতে পারে
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নবান্নে অভিযানে নেমেছে বিজেপি। আগে থেকেই তারা ঘোষণা করেছিল, চার মিছিলে ঘিরতে চাইবে নবান্ন। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাই হাজার হাজার কর্মী এদিন অভিযানে অংশ নেন।
কী দাবিতে এই মিছিল?
বিজেপির নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে মূলত পুলিশ ও গেরুয়া বাহিনীর ধুন্ধুমারে চাপে পড়ে গিয়েছে আন্দোলনের বিষয়আশয়। সুনির্দিষ্ট কতগুলি দাবি নিয়ে এদিন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল বিজেপির যুব মোর্চা। সেগুলি হল—
সরকারি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হবে।
বেকারদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
পিএসসিতে নিয়োগ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে হবে।
ভাতা ও খয়রাতির সংস্কৃতি বন্ধ করে বেকারদের কাজের গ্যারান্টি করতে হবে।
জায়গায় জায়গায় সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজি চলবে না।
মিথ্যা মামলা দিয়ে বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা ও পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
বিজেপির নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে কী ঘটল এদিন?
বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোট চারটি মিছিল হবে হাওড়া ও কলকাতার চারটি পয়েন্ট থেকে। সেই মোতাবেক বিজেপি রাজ্য দফতর থেকে শুরু হয় একটি মিছিল। তা সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, এমজি রোড হয়ে হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে নবান্নের দিকে যাবে। এই মিছিলে নেতৃত্বে দেবেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অন্য একটি মিছিল শুরু হবে হেস্টিংস বিজেপি অফিস থেকে। তার নেতৃত্বে থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বাকি দুই মিছিল শুরু হয়। হাওড়া ময়দান এবং সাঁতরাগাছি থেকে। হাওড়া ময়দানের মিছিলে থাকবেন তেজস্বী সূর্য।
পুলিশ তথা রাজ্যের বক্তব্য, করোনার সময়ে এই ধরনের মিছিল মিটিং নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা ছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী মহামারীর সময়ে একসঙ্গে অনেক লোক জড়ো হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই অবস্থান নিয়ে পুলিশ এদিন জেলা ও মফস্বল শহর থেকে আসা বিজেপি কর্মীদের মিছিল যথাসম্ভব পথেই আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। দেখা গিয়েছে, ডানকুনি এলাকায় কলকাতাগামী মিছিলের উপর বেধড়ক লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। তা ছাড়া কলকাতায় প্রবেশের সমস্ত পথে ব্যরিকেড করে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। জল কামান, রঙীন জল, কাঁদানে গ্যাস ইত্যাদি সবেরই বন্দোবস্ত রাখে পুলিশ।
খণ্ডযুদ্ধ
পুলিশ ব্যারিকেড করলে বিক্ষোভকারীরা যে তা ভাঙতে চাইবে সেটাই দস্তুর। অতীতে বাম, তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচীর সময় তা করেছে। এদিনও সেটাই হয়েছে।
হেস্টিংসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে বিজেপি কর্মীরা। পাল্টা লাঠি চার্জ করে পুলিশ।
বিক্ষোভকারীরা হাওড়া ব্রিজে ওঠার চেষ্টা করলে সেখানে জলকামাল দাগে পুলিশ। হাওড়া ব্রিজে ইট বৃষ্টি হয়। হাওড়া ময়দান এলাকায় বিজেপি কর্মীরা বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ।
হাওড়ায় এক বিজেপি কর্মীর থেকে পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ। তার নাম বলবিন্দর সিংহ। সে অর্জুন সিংয়ের লোক বলে পুলিশের দাবি।
ইএম বাইপাসে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। বড় বাজার, মহাত্মা গান্ধী রোড, হাওড়া, ডানকুনি সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। এলোপাথারি লাঠি চালাতে দেখা যায় পুলিশকে।
পুলিশ বিজেপি সংঘাতে আহত
বিজেপির সর্বভারতীয় যুব মোর্চার সভাপতি তেজস্বী সূর্য দাবি করেছেন, তাঁদের অন্তত ১ হাজার কর্মী পুলিশের লাঠিতে আহত হয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সম্পাদক অরবিন্দ মেননের পায়ে পুলিশের লাঠি লাগে বলে অভিযোগ। তিনি আহত হয়েছে।
এদিন অভিযানের শুরুর দিকেই পুলিশের রঙীন জল তথা জলকামানের ধাক্কায় আহত হন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রক্তবমি করতে শুরু করে দেন বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিজেপির পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতোও আহত হয়েছেন। পুলিশের লাঠিতে তিনি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিজেপির সম্পাদক শর্বরীকে পুলিশ মারধর করেছে বলে অভিযোগ। পুলিশ তাঁর শাড়ি ছিঁড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এই মিছিলের আদৌ কি প্রভাব রয়েছে?
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, বিজেপি কোনও রাজনৈতিক দল নয় ওরা সন্ত্রাসবাদী। তৃণমূল নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও বিজেপি যে ভাবে মিছিল করল তাতে বাংলার মানুষই বিপন্ন হবে। এই মিছিলকে মানুষ ভাল ভাবে নেবে না বলে আশা করছে তৃণমূল। তাঁদের মতে, এতে হিতে বিপরীত হল বিজেপির।
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গতকালই রাজ্য নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, দলের কর্মীরা এমন কিছু না করেন যাতে উল্টে ফায়দা পেয়ে যায় তৃণমূল। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে বিশৃঙ্খল দল বলে প্রমাণ করতে চায়।
এদিন বহু জায়গায় বিজেপি কর্মীরা বাধা পেয়ে অবস্থান করতে বসে পড়েন। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে চান। পরে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকলস্কর নিয়ে মিছিল করলে করোনা ছড়ায় না, বিজেপি মিছিল করলেই নাকি করোনা ছড়াবে! মানুষ কি বোকা!
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বাংলায় বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাব, নিয়োগে দুর্নীতির মতো বিষয় নিয়ে যুব সমাজ সরকারের উপর ক্ষেপে রয়েছে। এই আন্দোলনকে তাঁরা ইতিবাচক ভাবে নেবেন বলে আশা করছেন বিজেপি নেতারা।
0 Response to "বিজেপির নবান্ন অভিযানের কারণ কী, কী ঘটল সারাদিনে, এর প্রভাবই বা কী হতে পারে"
Post a Comment