দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষ, চলে গেলেন ফেলুদা
Sunday, November 15, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষ। চলে গেলেন ফেলুদা। বাংলা চলচ্চিত্রে যুগাবসান। প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ, রবিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট নাগাদ বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
বেলভিউ হাসপাতালে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে রয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশাসনের অন্য শীর্ষ কর্তারা।
করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সৌমিত্রবাবু। তারপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একাধিক কোমর্বিডিটি ছিল তাঁর। হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম দুদিন ভাল ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তারপর থেকেই তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। অবস্থার অবনতি হওয়ার পরই তাঁকে আইটিইউতে স্থানান্তর করা হয়। অক্সিজেন স্যাচুরেশনে সমস্যা হচ্ছিল প্রবীণ অভিনেতার। মাঝে জানা যায় তাঁর মূত্র নালিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত কয়েকদিন চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছিলেন না বর্ষীয়ান অভিনেতা। তাঁকে ভেন্টিলেশনেও দেওয়া হয়। মস্তিষ্কে স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হার মানলেন সৌমিত্রবাবু।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি, কৃষ্ণনগরে। তাঁর বাবা ছিলেন মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং মা আশালতা চট্টোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরেই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা তাঁর। এরপর চাকরি সূত্রে বাবা চলে আসেন হাওড়ায়। তারপর বাকি স্কুল জীবন কাটে হাওড়া জিলা স্কুলে। এরপর আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে স্নাতক হন সৌমিত্রবাবু।
স্কুল জীবন থেকেই নাটক, আবৃত্তি করতেন তিনি। কলেজে পড়ার সময়েই রেডিওতে কাজ করা শুরু। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ছবিতে কাজ করেন তিনি। সেই তাঁর সেলুলয়েডে অভিষেক। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি। সোনার কেল্লা এবং জয়বাবা ফেলুনাথে ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্রবাবুর অভিনয় কালজয়ী হয়ে রয়েছে।
তপন সিনহা, মৃণাল সেন, অজয় করের মতো পরিচালকের পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। ছ’দশক ধরে কয়েকশ বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্রবাবু। সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক, যাত্রা, টিভি সিরিয়াল, টেলি ছবিতেও কাজ করেছেন পাল্লা দিয়ে। একাধিক নাটক নির্দেশনাও করেছেন। আবৃত্তি পাঠ ছিল তাঁর সহজাত। পশ্চিমবাংলার যে কয়েকজন মানুষ গীতবিতান কার্যত মুখস্থ বলতে পারেন তাঁদের মধ্যে সৌমিত্রবাবু ছিলেন অন্যতম।
শুধু বাংলা বা দেশ নয়, তাঁর অভিনয় দক্ষতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সমাদৃত হয়েছে। পুরস্কারের তালিকাও দীর্ঘ। পদ্ম ভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে, বঙ্গবিভূষণ-এর পাশাপাশি ২০১৭ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান লিজিওঁ অফ অনার পান সৌমিত্রবাবু।
তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলা তথা দেশের সংস্কৃতি মহলে।
0 Response to "দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষ, চলে গেলেন ফেলুদা"
Post a Comment