রায়ডু, মনে হয় নির্বাচকদের উপর রাগ মেটাল
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-এই ম্যাচে আরও একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, সেটি হল টসে জিতে যে প্রথমে ফিল্ডিং নেবে, তারাই অধিকাংশ ম্যাচ জিতবে। কেননা পরের দিকে শিশির পড়ছে পিচে ও মাঠে, তাই বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছে। মুম্বইয়ের বোলারদের মধ্যে ক্রুনাল, রাহুল চাহার আরও কার্যকরি হলে চেন্নাই বিপাকে পড়ত। কিন্তু পিচের সুবিধে নিতে পারেনি ওরা। রোহিত চাইলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে পারত, পারল না পিচের চরিত্র বুঝে উঠতে পারেনি।
তবুও আমি বলব, ধোনিদের দলে সুরেশ রায়নাকে দরকার আছে। রায়না ফিরলে দলের শক্তি আরও বাড়বে, ওরা চ্যাম্পিয়নের দৌড় শুরু করবে। আমার মনে হয় রায়নাকে দ্রুত ফেরাতে পারলে ভাল। কারণ শ্যেন ওয়াটসন তো একবছর ক্রিকেটই খেলেনি। প্রতিদিন রায়ডু, ডু’প্লেসি জেতাবে ঠিক নয়। আর ধোনি কেন নীচে নামল বোঝা গেল না। অবশ্য স্যাম কুরানকে আগে পাঠানোর ফাটকাটা কাজে লেগেছে ওর।
আইপিএলে প্রতিবার আমি ইডেন গার্ডেন্সের প্রথম ম্যাচে মাঠে যাবই। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এবারও যেতাম, যদি না করোনাকাল আমাদের মধ্যে আসত। আর এই বিনোদনের লিগ চলে যেত সুদূর আরবে।
অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন, কেন যাই? তার একটাই কারণ মাঠের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। মাঠের উন্মাদনা উপভোগ করতে। আমরা তো ক্রিকেটার, ঘরের ড্রয়িংরুমে খেলা দেখতে ভাল লাগে না। সারা জীবন দর্শকভরা গ্যালারির সামনে খেলেছি, এরকম ফাঁকা মাঠে খেললে কী অনুভূতি হতো, আমি বলতে পারব না।
শনিবার যদিও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস দলের ক্রিকেটারদের দেখে মনেই হল ওরাও উপভোগ করতে পারছে না এই বিষয়টি। কয়েকদিন আগেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বলেছেন, ‘‘দর্শক ছাড়া খেলা, আর ফুল ছাড়া গার্ডেন, একই ব্যাপার।’’ আমিও তাই মনে করি। দর্শকরাই যে কোনও খেলোয়াড়দের ভাল খেলার অক্সিজেন। গ্যালারির শব্দব্রক্ষ্মই খেলোয়াড়দের তাতায় ভাল পারফরম্যান্সের জন্য।
এবার আসি খেলা প্রসঙ্গে। আইপিএলে আমরা যে ধরনের ফাস্ট পিচ দেখে অভ্যস্ত, সেরকম পিচ দেখলাম না আবুধাবির আল জায়েদ স্টেডিয়ামে। অত্যন্ত স্লো উইকেট, বল পড়ে দেরিতে ব্যাটে আসছে। সেই কারণে আমরা বেশি চার-ছয় হতে দেখলাম না। মুম্বই ইনিংসে মাত্র চারটি ওভার বাউন্ডারি দেখলাম, দুটি হার্দিক, একটি সৌরভ ও একটি পোলার্ডের। বল ব্যাটের মাঝখানে লাগলে আরও ছয় দেখতাম।
আমার যা মনে হচ্ছে, তাতে এই আইপিএলে আমরা বিগ শট বেশি দেখব না। এবং এটাও বলে রাখি, দুবাই, শারজা ও আবুধাবির উইকেট স্পিনিংই হবে, স্পিনাররা সাহায্য পাবে। সেই জন্যই এম এস ধোনিরা কেন এনগিডির বদলে হ্যাজেলউর্ডকে খেলালো না, সেটাই অবাক লাগছে। হ্যাজেলউর্ড সবেমাত্র ওয়ানডে সিরিজ খেলে এল ইংল্যান্ড থেকে, তাঁকে নিলে ভালই হতো। এমনকি খেলাতে পারত পাকিস্তানের নামী স্পিনার ইমরান তাহিরকেও। ওকে ডাগআউটে বসে থাকতে দেখে আরও অবাক হলাম। স্পিনিং উইকেট বলেই পীষূস চাওলা, জাদেজারা সফল হয়েছে।
শেষ চার ওভারে যেরকম রান হবে ভাবা গিয়েছিল, তা দেখতে পেলাম না। মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যানরা পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। তারপরেও ১৬২ রান খুব একটা খারাপ স্কোর নয়। ১৭২ রান হলে ঝুঁকিহীন হতো। যেহেতু ব্যাটিং পিচ নয় একেবারেই, তাই এই স্কোর।
আরও একটি বিষয় বলব, চেন্নাই দলের ফিল্ডিং। ফাফ ডু প্লেসি যেভাবে দুটি ক্যাচে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছে, কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। কতটা ফিট থাকলে বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে বাজপাখীর মতো ক্যাচ ধরা যায়। এই গরমের মধ্যে বিদেশীগুলোর সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে, তারপরেও যেভাবে ওরা নিজেদের সেরাটা দিচ্ছে, ভাল বিষয়।
এবং এম এস ধোনি। যাঁকে নিয়ে বলতে গেলেই একটা আলাদা আনন্দ হয়। প্রায় একবছর মাঠের বাইরে, চেন্নাইতে কয়েকদিন প্রস্তুতি, আর দুবাইতে কয়েকদিন শিবিরে কাটানোর পরে এত ফিটনেস কোথায় ছিল, ভাবলে অবাক লাগে। একজন প্রকৃতঅর্থের জাত স্পোর্টসম্যান, না হলে ক্রুনাল পান্ডিয়ার ক্যাচটি শরীর ছুঁড়ে যে তৎপরতায় ধরল, মনে হচ্ছে পুরনো ধোনিকে দেখছি। এটাই তো ওঁর নামের ক্যারিশমা। তারপর নতুন লুকে ওকে দেখলাম, ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়িতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : টসে জিতে চেন্নাইয়ের ফিল্ডিং। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স : ১৬২/৯। সৌরভ তিওয়ারি ৪২, কুইন্টন ডি’কক ৩৩, পোলার্ড ১৮, রোহিত ১২, এনগিডি ৩/৩৮, চাহার ২/৩২, জাদেজা ২/৪২।
চেন্নাই সুপার কিংস : ১৬৬/৫। আম্বাতি রায়ডু ৭১, ডু প্লেসি ৫৮। চেন্নাই পাঁচ উইকেটে জয়ী।
0 Response to "রায়ডু, মনে হয় নির্বাচকদের উপর রাগ মেটাল"
Post a Comment