-->
দুর্নীতির অভিযোগে কড়া অবস্থান রাজ্যের,১৯ রেশন ডিলার গ্রেফতার, শোকজ ২৭১ জনকে | বঙ্গ প্রতিদিন

দুর্নীতির অভিযোগে কড়া অবস্থান রাজ্যের,১৯ রেশন ডিলার গ্রেফতার, শোকজ ২৭১ জনকে | বঙ্গ প্রতিদিন



বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-লকডাউনের সময়ে রেশন বিলি নিয়ে একের পর এক অভিযোগের পরে কড়া অবস্থান নিতে শুরু করেছে নবান্ন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগে ১৯ জন রেশন ডিলারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ‘দ্যা ওয়াল’-কে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি আরও জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ২৭১ জন রেশন ডিলারকে শোকজ করা হয়েছে। এদিন টেলিফোনে মন্ত্রী জানিয়েছেন, “সাধারণ মানুষের যাতে দুর্ভোগ না হয় তার জন্য লকডাউনের সময়ে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই সুযোগে কোনও রেশন ডিলার দুর্নীতি করলে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। দোষ প্রমাণ হলে লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।”
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রেশনে দোকানের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে বলেও খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, যেখানে যেখানে রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেই সব জায়গায় আপাতত চাল-ডাল বিলির ব্যবস্থা সরাসরি খাদ্য দফতরের অফিসাররা সামলাবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যে রেশন ব্যবস্থায় লকডাউনের সময়ে নানা দুর্নীতি হচ্ছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ তুলে আসছে বিরোধী দলেরা। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পরেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিনামূল্যে রেশনের বেশ কিছু ঘোষণা করেছিল। তার পর থেকেই বিরোধীরা বিশেষ করে বিজেপি বারবার অভিযোগ করে যে বহু জায়গায়, রেশন দোকানের পরিবর্তে তৃণমূলের স্থানীয় কার্যালয় থেকে চাল-গম (রেশনের) বিলি হচ্ছে। দুর্নীতি ও মজুতের অভিযোগও তোলা হয়েছিল বারবার।
এর পরে রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা নিয়ে নিজেও বিরক্ত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এনিয়ে খাদ্যমন্ত্রীকে ধমক দেওয়া ছাড়াও খাদ্য সচিবের পদ থেকে মনোজ আগরওয়ালকে সরিয়ে দেন। এর পরেও থামেনি রেশন নিয়ে ক্ষোভ। এমনকী রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও সরব হন। ১৮ এপ্রিল রাজ্যপাল বলেন, “শুধু লোক দেখানো ব্যবস্থা নিলে চলবে না, এই ঘটনায় অনেক ক্ষমতাশালী জড়িত”। তাঁর কথায়, “গণবন্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতির বেলুন রোজই একটু একটু করে বড় হচ্ছে। এখনই না আ়টকাতে পারলে রাজ্যে আগের সব দুর্নীতিকে লজ্জা পাইয়ে দেবে।”
সেই সময় থেকেই রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি বন্ধ করতে কড়া হাতে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেয় খাদ্য দফতর। রেশন দোকান খো‌লা ও বন্ধের সময় ঠিক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন একবেলা নয়, প্রত্যেক রেশন দোকান দিনে দু’বার খুলতে হবে। এত কিছু করেও রেশন নিয়ে ক্ষোভ কমানো যায়নি। প্রতিদিনই কোনও না কোনও জেলা থেকে বিক্ষোভের খবর আসতে থাকে। কোথাও কোথাও পুলিশ নেমেও পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি। পয়লা মে হাসনাবাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় একজনের। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব়্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স নামাতে বাধ্য হয় প্রশাসন। শনিবারও মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানে গোলমাল হয়। লালগোলায় রেশন ডিলারের বাড়ির সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য দাবি করেছেন, “বিভিন্ন জায়গায় যে বিক্ষোভ হচ্ছে তার পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। কংগ্রেস ও বিজেপি বন্ধুত্ব করে এই কাজ করছে। সাধারণ মানুষের পাশে আছে সরকার। ৯ কোটি ৯৬ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে সরকার। এটা সহ্য হচ্ছে না বিরোধীদের। তবে এটাও ঠিক যে কিছু ডিলার দুর্নীতি করছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।” মন্ত্রী এদিন এও জানিয়েছেন যে, এবার থেকে কোথাও রেশন দোকানে গোলমাল হলে সামায়িকভাবে রেশন বিলি বন্ধ রাখা হবে।
ডিলারদের দুর্নীতি ছাড়াও পর্যাপ্ত রেশন সামগ্রী না থাকাও একটা বড় সমস্যা বলে দাবি খাদ্য দফতরের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, “তিন মাসের জন‍্য (এপ্রিল,মে,জুন) ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল দরকার রাজ্যের। সেই জায়গায় এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল পেয়েছে রাজ‍্য। এদিকে ডাল প্রয়োজন প্রতি মাসে সাড়ে ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৪ হাজার মেট্রিক টন।” কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে ওই কর্তার আরও দাবি, রাজ‍্যে জাতীয় খাদ‍্য সুরক্ষার আওতাধীন বেনিফিশিয়ারির সংখ‍্যা ৬ কোটি ১ লক্ষ। কেন্দ্র ও রাজ‍্য মিলিয়ে মাসে মোট ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু পরিমাণ মতো চাল, ডাল না পাওয়ায় রেশন ব‍্যবস্থা বিপর্যস্ত হচ্ছে।

0 Response to "দুর্নীতির অভিযোগে কড়া অবস্থান রাজ্যের,১৯ রেশন ডিলার গ্রেফতার, শোকজ ২৭১ জনকে | বঙ্গ প্রতিদিন"

Post a Comment

Article Top Ads

Central Ads Article 1

Middle Ads Article 2

Article Bottom Ads