করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় এখনও বিশ্বের তিনেই ভারত, নতুন সংক্রমণ প্রায় ৭০ হাজার
Tuesday, September 1, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক :-করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরে এখনও বিশ্বে তিন নম্বর স্থানেই রয়েছে ভারত। দেশের দৈনিক সংক্রমণ চিন্তার কারণ। গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে। দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে ৭৮ হাজার কোভিড আক্রান্তের রেকর্ড রয়েছে ভারতের। আজ, মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনে দেখা গেছে, একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৯২১ জন।
দেশে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছুঁতে চলেছে। আজকের হিসেবে ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ১৬৬। কোভিড পজিটিভিটি রেট তথা সংক্রমণের হার বাড়ছে দেশে। যদি পজিটিভিটি রেট বাড়তে থাকে তাহলে কম দিনেই ৪০ লাখের গণ্ডি পেরোবে ভারত।
মৃতের সংখ্যাতেও বিশ্বে তিন নম্বরে রয়েছে ভারত। করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৮১৯ জনের। আমেরিকায় ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৭ হাজারের কাছাকাছি, ব্রাজিলে ১ লাখ ২১ হাজার।
উদ্বেগের কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি কিছু ইতিবাচক দিকও আছে। কেন্দ্রের বুলেটিনে ইতিবাচক দিক হল মৃত্যুহার কমে যাওয়া। দেশে এখন কোভিড ডেথ রেট বা মৃত্যুহার ১.৭৭%। সুস্থতার হারও বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ হাজারের বেশি রোগী করোনা সারিয়ে সুস্থ হয়েছেন। সুস্থতার হার বা কোভিড রিকভারি রেট ৭৬.৯৪%।
কোভিড পজিটিভিটি রেট তথা সংক্রমণের হার বেড়েছে দেশে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির এটাও একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিদিন যত জন রোগীর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যতজন রোগীর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলে কোভিড পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। কোভিড পজিটিভিটি রেট থেকেই বোঝা যায় সংক্রমণ কী পরিমাণে ছড়াচ্ছে এবং কতজনের মধ্যে ছড়াচ্ছে। সপ্তাহের গোড়ায় দেখা গিয়েছিল, এই সংক্রমণের হার কখনও বেড়েছে আবার কখনও ঝপ করে কমে গেছে। গত সোমবার কোভিড পজিটিভিটি রেট ছিল ৮ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু তারপরেই একলাফে সংক্রমণের হার দশ শতাংশের কাছাকাছি চলে যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায়, কিছু রাজ্যে অবশ্য এই পজিটিভিটি রেট চিন্তার কারণ। যেমন মহারাষ্ট্র, গোয়া, ছত্তীসগড়, হিমাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশে সংক্রমণের হার বেশি। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রক এখন জানাচ্ছে, কোভিড পজিটিভিটি রেট ফের কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কেন্দ্রের লক্ষ্য হল এই পজিটিভিটি রেট পাঁচ শতাংশের মধ্যে বেঁধে ফেলা।
জুলাই মাসের শেষে দেশের ‘এফেক্টিভ রিপ্রোডাকশন নম্বর’ তথা ‘আর নম্বর’ ছিল ১.১৭ পয়েন্টে। অগস্টের শেষে এসে দেখা গেল আর নম্বর অনেকটাই কমেছে। চেন্নাইয়ের ইনস্টিটিউট অব ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সের গবেষকরা ভাল খবর শুনিয়েছেন। দেশে এখন আর নম্বর কমে দাঁড়িয়েছে ১.০৪ পয়েন্টে। অসম, তামিলনাড়ু, বিহারে আর নম্বর একের নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
গত ৪ মার্চ দেশের আর নম্বর ছিল ১.৮৩। ওই সময় উহানের আর নম্বর ছিল ২.১৪ এবং ইতালির ২.৭৩, যা ভারতের থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেশি। ভারতে ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে এই নম্বর কমতে থাকে। ৬ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত আর নম্বর নেমে আসে ১.৫৫-এ। জুনের প্রথমে সেটাই পৌঁছয় ১.৪৯ পয়েন্টে। জুনের মাঝামাঝি আরও কমে আর নম্বর থিতু হয় ১.১২ পয়েন্টে। আর নম্বরের এই ধারাবাহিক পতন দেখেই লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে আনলক শুরুর পরেই জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ফের আর নম্বর বেড়ে পৌঁছে যায় ১.১৯-এ। এখন সেটাই কমে গেছে ১.০৪ পয়েন্টে। আর নম্বর কমলে করোনা ট্রান্সমিশন রেট তথা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার কমবে। একের নিচে নেমে গেলে অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যাও কমে যাবে। পাশাপাশি, একজন আক্রান্তের থেকে বেশিজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর হারও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কোভিড টেস্ট আরও বেড়েছে দেশে। আইসিএমআরের হিসেবে এখনও অবধি চার কোটির বেশি কোভিড টেস্ট হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মোট ৪ কোটি ২৩ লক্ষ ০৭ হাজার ৯১৪টি। প্রতিদিন প্রায় আট লাখের বেশি কোভিড টেস্ট হচ্ছে। গতকালই দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে দশ লাখের বেশি। আইসিএমআরের হিসেবে, ১০ লাখ ১৬ হাজার ৯২০, যা এখনও অবধি সর্বাধিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছিল, প্রতিদিন ১০ লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দেশের মোট ১৫৮৭টি ল্যাবরেটরিতে কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে যার মধ্যে সরকারি ল্যাবরেটরি রয়েছে ১০০৪টি এবং বেসরকারি ল্যাব ৫৮৩টি। রিয়েল টাইম আরটি-পিসিআর টেস্ট হচ্ছে ৮১৫টি ল্যাবে, ট্রু্ন্যাট টেস্ট করা হচ্ছে ৬৫১টি ল্যাবরেটরিতে।
0 Response to "করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় এখনও বিশ্বের তিনেই ভারত, নতুন সংক্রমণ প্রায় ৭০ হাজার"
Post a Comment