পাঁচ পয়েন্টের ভিত্তিতে রায় বিচারকের,পরিকল্পিতভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়নি
আগে থেকে বাবরি মসজিদ ভাঙার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। ২৮ বছরের পুরানো মামলায় রায় দিতে গিয়ে বুধবার এমনই বললেন সিবিআই আদালতের বিচারক। ওই মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন ৩২ জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলি মনোহর যোশী, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনয় কাটিহার, সাক্ষী মহারাজ প্রমুখ। আদালত এদিন ৩২ জন অভিযুক্তকেই নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে।
বিচারক তাঁর রায়ে পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করেন। প্রথমত, পরিকল্পিতভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়নি। দ্বিতীয়ত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তৃতীয়ত সিবিআই যে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড পেশ করেছে, তা প্রামাণ্য কিনা জানা যাচ্ছে না। চতুর্থত, সমাজবিরোধীরা মসজিদ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। অভিযুক্তরা তাঁদের থামাতে চেষ্টা করেছিলেন। পঞ্চমত, অডিও ক্যাসেটে কয়েকজনের ভাষণ শোনা যাচ্ছে বটে কিন্তু কী বলা হয়েছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
করসেবকরা বিশ্বাস করত, যেখানে বাবরি মসজিদ দাঁড়িয়েছিল, সেখানেই জন্ম হয়েছিল রামচন্দ্রের। তাই তারা মসজিদটি ভেঙে ফেলে। তারপরে দেশ জুড়ে দাঙ্গা শুরু হয়। সরকারি হিসাবমতো দাঙ্গায় ৩০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। অযোধ্যার জমি নিয়ে যে মামলা চলছিল, তা এই বাবরি ভাঙার মামলার থেকে আলাদা। জমির মামলায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। গত ৫ অগাস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়ার পরে পুলিশ দু’টি এফআইআর করে। প্রথমটি করা হয় কয়েক লক্ষ করসেবকের বিরুদ্ধে। তাঁরা ৬ ডিসেম্বর মসজিদের ওপরে উঠে হাতুড়ি ও কুড়ুল দিয়ে সৌধটি ভেঙে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয় এফআইআরটি হয় আটজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন বিজেপির আডবাণী, যোশি, উমা ভারতী এবং বিনয় কাটিহার এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, গিরিরাজ কিশোর, বিষ্ণুহরি ডালমিয়া এবং সাধ্বী ঋতাম্ভরা। তাঁদের মধ্যে বিষ্ণুহরি ডালমিয়া, গিরিরাজ কিশোর ও অশোক সিঙ্ঘল মারা গিয়েছেন।
করসেবকদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করে সিবিআই। অন্যদিনে বিজেপি ও ভিএইচপি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে।
বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। তাঁদের মৌখিক সাক্ষ্য এই মামলায় বড় ভূমিকা পালন করেছে। সিবিআই মোট ১০২৬ জন সাক্ষীর তালিকা প্রস্তুত করেছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক ও পুলিশকর্মীরা।
0 Response to "পাঁচ পয়েন্টের ভিত্তিতে রায় বিচারকের,পরিকল্পিতভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়নি"
Post a Comment