মঙ্গলের পথে উড়ে গেল রোভার ‘পারসিভিয়ারেন্স’, মিস কৌতুহলের পরে ফের ইতিহাস গড়ল নাসা | বঙ্গ প্রতিদিন
Friday, July 31, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-আরও এক ঐতিহাসিক মঙ্গলযাত্রার সূচনা হল। পৃথিবীর মাটি ছাড়িয়ে মহাশূণ্যে উড়ে গেল নাসার মঙ্গলযান ‘পারসিভিয়ারেন্স’। মঙ্গলযাত্রায় ফের ইতিহাস গড়ল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
কুড়ি সালে নাসার সবচেয়ে বড় মহাকাশ-মিশন ‘পারসিভিয়ারেন্স’। রহস্যময় লাল গ্রহের প্রহেলিকা ফাঁস করতে এক কৌতুহলী চোখকে পাঠিয়েছিল নাসা। সেই ২০১২ সালে। মানুষের প্রতিনিধি হয়ে সে মঙ্গলেই কাটিয়ে দিয়েছে আটটা বছর। ‘মিস কিউরিওসিটি’ যার বাংলা করে দাঁড়ায় ‘মিস কৌতুহল’ রোভার এখনও রয়েছে মঙ্গলে। মাটি খুঁড়ছে, নীচু উপত্যকা, উঁচু ঢাল, আগ্নেয়গিরির ফুঁসে ওঠা, পাথুড়ে মাটির কম্পনের খবর পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। এবার মিস কৌতুহলের থেকেও উন্নত ও আধুনিক রোভারকে মঙ্গলে পাঠাল নাসা। এই রোভারের নামই ‘পারসিভিয়ারেন্স’।
নাসার মঙ্গল-অভিযানের দিন ঠিক হয়েছিল ২৭ জুলাই। তবে নানা কারণে সেই দিন পিছিয়ে আজ ৩০ জুলাই করা হয়েছে। ৭টা ৫০ ইডিটি (ইস্টার্ন ডেলাইট টাইম) অর্থাৎ ভারতীয় সময় ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আটলাস ভি-৫৪১ রকেটে চেপে মঙ্গলের দিকে উড়ে গেল পারসিভিয়ারেন্স রোভার। মঙ্গলের মাটিতে নামতে তার এক বছর সময় লাগবে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের মাটিতে পা দেবে পারসিভিয়ারেন্স। আটলাস রকেট সিরিজের পঞ্চম বৃহত্তম রকেট এই আটলাস ভি-৫৪১। এই রকেট বানিয়েছে লকহিড মার্টিন। ঐতিহাসিক মঙ্গলযাত্রার জন্য এই রকেটকেই বেছে নিয়েছে নাসা।
‘মিস কৌতুহল’-এর থেকেও উন্নত রোভার‘পারসিভিয়ারেন্স’, মঙ্গলের মাটি খুঁড়বে তিন রোবট
পারসিভিয়ারেন্স রোভার বানিয়েছে নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি (জেপিএল)। মঙ্গলের মাটি খুঁড়ে নমুনা জোগাড় করে আনার জন্য তার শরীরে ফিট করা হয়েছে ৪৩টি টিউব। ওজনে ১,০২৫ কিলোগ্রাম। নাসার এই পারসিভিয়ারেন্স মিশনের দায়িত্বে থাকা জেপিএলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার অ্যাডাম স্টেলৎজেনার বলেছেন, “দু’জন নভশ্চর যা কাজ করবে তার থেকে বেশি কাজ করবে রোবট। এই মঙ্গলযাত্রায় প্রথম লাল গ্রহের মাটি থেকে নমুনা কুড়িয়ে এনে দেবে তিনটি রোবট।” প্রথম রোবট জোড়া থাকবে রোভারের ‘স্যাম্পেল ক্যাচিং সিস্টেম’-এর সঙ্গে। মঙ্গলের মাটি খামচে নমুনা টিউবে ভরার জন্য রোভারের সাত ফুট লম্বা দুটি রোবোটিক হাত থাকবে। নুড়ি-পাথর, মাটির ধুলো সাবধানে তুলে আনতেও থাকবে বিশেষ যান্ত্রিক ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় রোবট দেখতে হবে উড়ন্ত চাকতির মতো। তাকে লাগানো হয়েছে রোভারের সামনের দিকের অংশের সঙ্গে। এর নাম ‘বিট ক্যারাউজেল’ (Bit Carousel) । প্রথম রোবটের থেকে নমুনা জোগাড় করাই এর কাজ। তাছাড়া ফাঁকা টিউবগুলো এগিয়ে তাড়াতাড়ি মাটি তুলতেও সাহায্য করবে এই রোবট।
তৃতীয় রোবটের আবার ১৬ ফুট লম্বা হাত আছে। নাসা বলছে এই রোবটের নাম ‘ টি-রেক্স আর্ম (T. rex arm) ।’ এটি থাকছে রোভারের পেটের কাছে। প্রথম রোবট যদি কাজে ইস্তফা দেয়, তাহলে এই রোবটের ডাক পড়বে। মাটি তোলা, নমুনা খুঁজে বার করা, টিউবে তোলা, সব কাজেই পটু এই টি-রেক্স আর্ম।
মঙ্গলের রহস্যভেদ করে চলেছে ‘মিস কৌতুহল’
১৯৭২ সালে মঙ্গলযাত্রার সূচনা করেছিল নাসা-র মেরিনার-৯ অরবিটার। মঙ্গলের অজস্র ছবি তুলে এক অচেনা জগতের দ্বার উন্মোচিত করেছিল। তার পর থেকেই মঙ্গল-অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। এখনও অবধি তিন রকমের মঙ্গল-অভিযান হয়েছে। এক, ফ্লাই বাই (মঙ্গলের ‘পাশ’ দিয়ে চলে যাওয়া); দুই, অরবিটার (মঙ্গলের কক্ষপথে ঘোরা); তিন, ল্যান্ডার/ রোভার (মঙ্গলে অবতরণ ও সফর করা)।
২০১২ সালে মঙ্গলে নামে মিস কৌতুহল। লাল গ্রহের মাটিতে জল ও প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে চলেছে নাসার এই রোভার। চলতি মাসের শুরুতেই ‘সামার ওয়াক’ করেছে মিস কিউরিওসিটি। প্রায় ২ হাজার ৭২৯ মঙ্গলের দিন থুরি ‘মারশিয়ান ডে’ (Martian Day) যত্রতত্র চষে বেরিয়ে নানারকম ছবি তুলে নাসার গ্রাউন্ড স্টেশনে পাঠিয়েছে। তার কৌতুহলী ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মঙ্গলের সেই বিখ্যাত ‘গ্রিনহেগ পেডিমেন্ট’ এবং গেডিজ ভ্যালিস (GV) । উত্তরে শার্প পাহাড় যাকে বলে মাউন্ট শার্পের পাদদেশে এই নীচু ভূমি বা গিরিখাত রয়েছে। পাথুড়ে জমি, দেখে মনে হবে শক্ত মাটিকে ভাঁজে ভাঁজে মুড়ে ফেলা হয়েছে। দেড় কিলোমিটারেরও বেশি চক্কর কেটে এই গিরিখাতের নানা অ্যাঙ্গেলের ছবি তুলেছে কিউরিওসিটি। তার তোলা ছবিতে ধরা দিয়েছে, ‘লাল গ্রহে’র উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’র (Arabia Terra) সুবিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে বড় বড় নদীর ‘ফসিল’-এর হদিশ মিলেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে ‘অ্যারাবিয়া টেরা’য় প্রায় ১৭ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বইত বড় বড় নদী। অ্যারাবিয়া টেরার মতোই সুবিশাল গিরিখাত ভেলস মেরিনারিস— লাল গ্রহের এই গিরিখাত (Grand Canyon) ৪০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২০০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং ৭ কিলোমিটার গভীর।
0 Response to "মঙ্গলের পথে উড়ে গেল রোভার ‘পারসিভিয়ারেন্স’, মিস কৌতুহলের পরে ফের ইতিহাস গড়ল নাসা | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment