জমি, শ্রম আর আইনে সাহসী ও বলিষ্ঠ সংস্কারের ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর, আরও কী আছে ঝুলিতে জল্পনা শুরু | বঙ্গ প্রতিদিন
Wednesday, May 13, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল:-পঙ্গু হয়ে যাওয়া অর্থনীতির হাল ফেরাতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করলেন ঠিকই। কিন্তু সেটাই একমাত্র নয়। বরং অনেকের মতে, চুলচেরা বিচার করতে গেলে দেখা যাবে, মোদীর বড় ঘোষণা রয়েছে ‘কুড়ি লক্ষ কোটির শিরোনামের’ আড়ালে। তা হল, সাহসী ও বলিষ্ঠ সংস্কারের ইঙ্গিত।
কেমনতর হতে পারে সেই সংস্কার?
প্রধানমন্ত্রী এদিন তার পুরো ব্যাখ্যা করেননি। তবে বলেছেন, দেশে উৎপাদন বাড়াতে গেলে, সাপ্লাই চেইনকে আরও মজবুত করে গড়ে তুলতে হলে, সাহসী সংস্কার প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “সংস্কারকে নতুন উচ্চতা দিতে হবে। যে সংস্কার মেক ইন ইন্ডিয়ার সংকল্পকে আরও দৃঢ় করবে”।
এই প্রসঙ্গে একেবারে স্বকীয় কেতায় ‘থ্রি-এল’ –এর উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা হল, ল্যান্ড অর্থাৎ জমি, লেবর অর্থাৎ শ্রম এবং ল অর্থাৎ আইন।
আরও পড়ুন
১৭ মে পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ হুগলির ১১ থানা এলাকায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রুখতে সিদ্ধান্ত প্রশাসনের | বঙ্গ প্রতিদিন
পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য হল উৎপাদন ক্ষেত্রে দেশি ও বিদেশি পুঁজি টানা। কেন্দ্রে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকে সেই চেষ্টা করছেন মোদী। সে জন্যই মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাতে সাড়া পাননি। কারণ, বিদেশি পুঁজি টানার পথে বড় অন্তরায় এদেশে জমি অধিগ্রহণের নিয়ম, শ্রম আইনের জটিলতা এবং বিভিন্ন আনুসঙ্গিক আইনকানুন।
কিন্তু এখন যে হেতু করোনা সংক্রমণের পর গোটা পৃথিবী জুড়ে চিনের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইছেন সেটাকেই সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করতে। এবং সে জন্য শ্রম আইনে সংস্কার করতে উদ্যোগী হতে পারে মোদী সরকার। তাঁর প্রথম মেয়াদে জমি অধিগ্রহণ আইনকে শিল্প সহায়ক করার চেষ্টা করতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা রুখতে গোটা দেশ জুড়ে প্রতিবাদে কৃষক আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বার সেই চেষ্টা ফের হতে পারে। সেই সঙ্গে কর ব্যবস্থার সরলীকরণ করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ দিন তাঁর বক্তৃতায় ইঙ্গিত দেন।
তবে বলিষ্ঠ সংস্কার করতে চাইলে সরকার, গ্রাম ও শহরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে যে কিছু ছাড় দিতে পারে সেই বার্তাও এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ছিল। তিনি বলেন, লোকাল স্তরে অর্থাৎ স্থানীয় ভাবে এমন পণ্য উৎপদান করতে হবে যা গুণমানের জন্য গ্লোবাল হয়ে উঠবে। লোকাল উৎপাদন দিয়ে দেশের চাহিদা মেটাতে হবে। তাঁর কথায়, ‘লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে আমাদের’।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী এ দিন যেভাবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের উপর জোর দিয়েছেন, তাতে মনে করা হচ্ছে কৃষি বিপণন নীতির সংস্কারেও হাত দিতে পারে সরকার। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে সায় দিলেও অবাক হওয়ার কারণ নেই। এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যাবে সরকার সংসদের মাধ্যমে আইন পাশ না করিয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কারের পথে এগোতে চাইবে। কারণ, সংস্কারে পথে সংসদে যে বাধা আসতে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছেই।
বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণাও ফাঁপা—শিরোনাম সর্বস্ব। গালভরা ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ হয়তো দেখা যাবে একটা ধারণা মাত্র। তাই গরিবের কাছে কতটাকা আদতে পৌঁছলো তা দেখেই প্রতিক্রিয়া জানানো ভাল।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজ মিডিয়া এবং দেশের মানুষকে শুধুই হেডলাইন দিয়েছেন। কবে মানুষকে সাহয্য করে বাদবাকি সাদা পাতাটা পূর্ণ হবে কে জানে!” সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ নীলোৎপল বসু বলেন, “এই সরকারের চলার যা স্টাইল তাতে যতক্ষণ না পুরো ঘোষণা হচ্ছে ততক্ষণ দারুণ প্যাকেজ বলার অবকাশ নেই। কারণ বড়লোকের থেকে ট্যাক্স সংগ্রহের প্রশ্নে এই সরকার যতটা উদার, নির্মাণকর্মী বা ক্ষেতমজুরের অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের প্রশ্নে ততটাই অনীহা রয়েছে। ফলে কতটা কী হচ্ছে তা আগামী কয়েক দিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
0 Response to "জমি, শ্রম আর আইনে সাহসী ও বলিষ্ঠ সংস্কারের ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর, আরও কী আছে ঝুলিতে জল্পনা শুরু | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment