'যেন ঝলসে যাচ্ছিল চামড়া,জ্বালাপোড়া করছিল শরীর,দমবন্ধ হয়ে আসছিল’, বললেন বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দারা | বঙ্গ প্রতিদিন
Thursday, May 7, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-চামড়া যেন জ্বলে যাচ্ছিল। চোখ ঘষতে ঘষতে লাল হয়ে যায়। ক্রমাগত জল পড়ছিল চোখ থেকে। বিকট গন্ধে মাথা ঘুরছিল, দম বন্ধ হয়ে আসছিল, বিষাক্ত গ্যাস যেন গোটা শরীরটাকেই কব্জা করে নিচ্ছিল ধীরে ধীরে, ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি আরআর ভেঙ্কটাপুরম। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পরে এমনই বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হয় গোপালপত্তনম এলাকার মানুষজনকে। বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ শহরতলির গোপালপত্তনম এলাকা। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে বিষাক্ত গ্যাস ধোঁয়াশার মতো ঘিরে ফেলেছে গোটা এলাকাকে। রাস্তাঘাটে জ্ঞান হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন মানুষজন। গরু, কুকুরের অসাড় দেহও পড়ে রয়েছে তারই পাশে।
রাত তখন ২টো হবে। গভীর ঘুমে গোপালপত্তনম। আচমকাই গ্যাসের কটূ গন্ধে ঘুম ভেঙে যায় অনেকেরি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্বালাপোড়া করতে থাকে শরীর। শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট। এলাকারই বাসিন্দা নবীন বলেছেন, “প্রথমটা কিছু বুঝে উঠতে পারেননি কেউই। রাস্তায় বেরলে দেখা যায় গোটা এলাকায় যেন কুয়াশা জমেছে। সেই সঙ্গে ঝাঁঝাঁলো গন্ধ। সারা গায়ে জ্বালাপোড়া ধরে গিয়েছিল, মনে হচ্ছিল চামড়া যেন ঝলসে যাচ্ছে। চোখ দিয়েও জল পড়ছিল সমানে। অনেকেই বমি করতে শুরু করেন। “
We didn't understand wt was happening, breathing issues, fog and allergies were developed. People fell as they couldn't breath, a local youth briefs the incident acc'to him incident happened around 2am.@thenewsminute @rgmlk @NitinBGoode @dhanyarajendran pic.twitter.com/Jk3bm694HI— CharanTeja (@CharanT16) May 7, 2020
ভোরের আলো ফোটার পরে গোটা এলাকায় দৌড়োদৌড়ি, চেঁচামেচি, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। গ্যাসের গন্ধ তখন আরও জোরালো। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। রাস্তায় বেরিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছে একের পর এক। ছোট বাচ্চা কোলে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে এলাকাবাসীদের অনেকেই, বলেছেন নবীন। চারদিকে শুধু কান্না আর আর্তনাদ। বিপদসঙ্কেত সাইরেন বেজে ওঠার পরে বোঝা যায় গ্যাস লিক করেছে। কিন্তু ততক্ষণে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক।
বিশাখাপত্তনমের এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামক রাসায়নিক সার কারখানা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস লিক করে প্রাণ হারিয়েছেন আট জন। তাদের মধ্যে রয়েছে দু’টি শিশুও। অসুস্থ হাজারের বেশি। বিশাখাপত্তনমের কিং জর্জ মেডিক্যাল কলেজে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি অনেকেই। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অসুস্থ হয়ে রাস্তাঘাটে পড়ে রয়েছেন বহু মানুষ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
আরও পড়ুন:
এলাকাবাসীরাই বলেছেন, লকডাউনের কারণে বন্ধ ছিল ওই কারখানা। শুধুমাত্র কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন পাহাড়ায়। আজ ভোর রাতে আচমকাই কারখানার পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস লিক করতে শুরু করে। নিরাপত্তারক্ষীরা সকলেই এই গ্যাসের প্রভাবে জ্ঞান হারান। তাই কী বিপর্যয় ঘটতে চলেছে তার খবর দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। ভোর রাত থেকে একটু একটু করে সেই বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকাতেই।
অসুস্থ হাজারের বেশি, দেখুন ভয়ানক সব ভিডিও,বিশাখাপত্তনমের কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস লিক | বঙ্গ প্রতিদিন
কী ধরনের বিষাক্ত গ্যাসে ছড়িয়েছে সেটা এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি। প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে ওই গ্যাস হতে পারে স্টাইরিন অথবা ভিনাইল বেঞ্জিন। গ্রেটার বিশাখাপত্তনম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিশনার শ্রীজানা গুম্মাল্লা বলেছেন, ওই রাসায়নিক কারখানায় মূলত পলিয়েস্টার পলিথিন তৈরি হত। এই পলিথিন তৈরির একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় স্টাইরিন। এটি একপ্রকার রাসায়নিক যৌগ যাকে ইথানাইলবেঞ্জিন, ভিনাইলবেঞ্জিন ও ফিনাইলইথেনও বলা হয়। তেলের মতো তরল যার কোনও রঙ নেই, ঝাঁঝাঁলো গন্ধ আছে। খুব সহজেই বাষ্পীভূত হতে পারে। রাসায়নিক কারখানায়গুলিতে স্টাইরিনের ব্যবহার হয়। মানুষের শরীরে নানারকম রোগের কারণ হতে পারে এই রাসায়নিক।
মহারাষ্ট্রেই ১৬ হাজার,দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল | বঙ্গ প্রতিদিন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে সংস্পর্শে এলে স্টাইরিনের প্রভাবে তীব্র জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয়, মনে হয় শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শ্বাসনালী দিয়ে এই গ্যাস শরীরে ঢুকলে শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধও করে দিতে পারে। খাদ্যনালীকেও জখম করতে পারে এই গ্যাস, স্নায়ুর উপরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্যাসের সংস্পর্শে থাকলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়। ভিনাইল বেঞ্জিন বা ভিনাইল ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসি তৈরিতে। সিন্থেটিক প্লাস্টিকজাত পণ্য তৈরি করতে এই রাসায়নিক কাজে লাগে।
অন্ধ্রপ্রদেশের ডিজিপি ডিজি সায়াং বলেছেন, এলাকায় দ্রুতগতিতে উদ্ধার কাজ চলছে। কিং জর্জ মেডিক্যাল কলেজে ৫০০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিরা ভর্তি অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে। কিং জর্জ মেডিক্যালের একজন ডাক্তার বলেছেন, অনেকের অবস্থাই সঙ্কটজনক। ১৫টি শিশুর অবস্থা গুরুতর। যদিও ডিজিপি দাবি করেছেন, এই গ্যাসের প্রভাবে বেশি মানুষ আক্রান্ত হননি, অনেকেই ছুটে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছেন। সেই সংখ্যাই নাকি বেশি।
বিশাখাপত্তনম জেলাশাসকের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, কারখানা সংলগ্ন তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ জায়গায়। সরকারি বাস বা গাড়িতে করে তাঁদের আপাতত নাইডুথোটা এলাকায় নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। গ্যাসের প্রভাব কমলে ফের তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।
0 Response to "'যেন ঝলসে যাচ্ছিল চামড়া,জ্বালাপোড়া করছিল শরীর,দমবন্ধ হয়ে আসছিল’, বললেন বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দারা | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment