২০ বছরের চেনা ক্যাম্পাসে ঢুকতে এই প্রথম ভয় করছে: জেএনইউয়ের নিগৃহীতা অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন
Monday, January 6, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক : প্রথমে ছিলেন ছাত্রী হিসেবে, তার পরে হন অধ্যাপিকা। দু’দশকের বেশি সময় ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন তিনি। অথচ আজ, জীবনে এই প্রথম বার সেই বিশ্ববিদ্যালয়তে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন সেই মানুষটিই। তিনি জেএনইউয়ের ভূগোলের অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন। রবিবার সন্ধেয় ক্যাম্পাস জুড়ে চলা দুষ্কৃতী তাণ্ডবে পড়ুয়াদের সঙ্গে আহত হয়েছেন তিনিও।
রবিবার সন্ধেয় আচমকাই তুলকালাম হয়ে ওঠে জেএনইউয়ের পরিস্থিতি। অভিযোগ ওঠে, মুখ বেঁধে, অস্ত্র হাতে প্রায় ৫০ জন দুষ্কৃতীর একটি দল ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের মারধর শুরু করে। পড়ুয়ারা সবরমতী হস্টেলে গিয়ে আশ্রয় নিলে হামলা চালানো হয় সেখানেও। ভাঙচুর চলে অবাধে। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় একাধিক ছাত্রছাত্রী ও পড়ুয়ার। জখম হন ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্ট ঐশী ঘোষ, ভূগোলের অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ অনেকে।
সেন্টার ফর স্টাডিজ় অফ রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অধ্যাপিকা সুচরিতা সোমবার ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে। তিনি বলেন, “ক্যাম্পাসে হঠাৎই হিংসা ছড়িয়ে পড়ল। বেশিরভাগই মুখ ঢাকা ছিল, লাঠিসোঁটা ছিল ওদের হাতে। ওরা পাথরও ছুড়ছিল আমাদের লক্ষ্য করে। একটা পাথর আমার কাঁধে এসে লাগে খুব জোরে। তার পরে একটা আধলা ইট ছুড়ে মারে আমার মাথায়।”
ঘটনার পরেই রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্থ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তার পরে গভীর ক্ষত দেখে পাঠানো হয় এইমস হাসপাতালে। ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি বললেন, “আমার ভয় লাগছে ক্যাম্পাসে ঢুকতে।”
সুচরিতা সেনের সঙ্গেই এইমস হাসপাতালে পাঠানো হয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষকে। তাঁর মাথাও ফেটেছে গভীর ভাবে। রক্তাক্ত অবস্থায় একটি ভিডিওয় তিনি জানান, নৃশংস ভাবে মারধর করা হয়েছে তাঁকে। পরে জানা যায়, ১৬টি সেলাই পড়েছে তাঁর মাথায়।
দুপুরের পরে ঐশী ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে। তারপরই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে বিজেপি ও আরএসএস-এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন সোমবারের হামলায় গুরুতর জখম ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ। তিনি বলেন, “যে লোহার রডের বাড়ি আমাদের শরীরে পড়েছে তার জবাব দেওয়া হবে বিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমেই। জেএনইউয়ের সংস্কৃতি কোনও হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরাও গণতান্ত্রিক পথেই মোকাবিলা করব হিন্দুত্ববাদীদের আগ্রাসনের।”
দুর্গাপুরের মেয়ে ঐশী আরও বলেন, “খুন করার উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা চালানো হয়েছিল গতকাল।” তাঁর অভিযোগ, “গত কয়েক দিন ধরেই সঙ্ঘ পরিবারের অনুগত কিছু অধ্যাপক আমাদের আন্দোলন ভাঙার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কাল যে ঘটনা ঘটেছে তাতে স্পষ্ট যে, মুখোশ পরা গুন্ডাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালিয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের একটা বোঝাপড়া ছিল। না হলে ওই ভাবে সংগঠিত হামলা চালানো যায় না।”
ছাত্রদের অভিযোগ, টানা তিন ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলেছে ক্যাম্পাসে। যে সবরমতী হোস্টেলে এই হামলা চালানো হয়েছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দিকে। জানা গিয়েছে, হামলার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের সমস্ত আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর চলে নির্বিচারে ভাঙচুর ও তাণ্ডব।
রবিবার রাতে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় ৩৪ জনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে। আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ আরও বেশ কয়েকজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা। এর মধ্যেই জানা গিয়েছে, হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সবরমতী হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুই পড়ুয়া। ওই দু’জনেরই আঘাত গুরুতর। দুই ছাত্রীরই পা ভেঙে গিয়েছে বলে খবর।
জেএনইউয়ের হোস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চলছে। লাগাতার আন্দোলনে পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৃদ্ধির হার কমানোর পরও আন্দোলন ওঠেনি। ছাত্রদের দাবি বর্ধিত ফি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। ঐশী এদিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তাঁর আর এক মুহূর্ত অধিকার নেই ওই পদে থাকার। তাঁর ইস্তফার দাবিতে আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

0 Response to "২০ বছরের চেনা ক্যাম্পাসে ঢুকতে এই প্রথম ভয় করছে: জেএনইউয়ের নিগৃহীতা অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন "
Post a Comment