-->
দাদা-নোবেল-রানু, অনেক পাওয়ার উনিশ অনেক লজ্জারও | বঙ্গ প্রতিদিন

দাদা-নোবেল-রানু, অনেক পাওয়ার উনিশ অনেক লজ্জারও | বঙ্গ প্রতিদিন



বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক :২০১৯ জুড়ে ঘটনার ঘনঘটা দেখেছে গোটা দেশ। পুলওয়ামার সন্ত্রাসবাদী হামলা থেকে বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রত্যাঘাত, লোকসভা ভোট থেকে মহারাষ্ট্রের মহানাটক, হায়দরাবাদ এনকাউন্টার থেকে উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ড—একের পর এক ঘটনা দেখেছে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা। আর গোটা ১৯ জুড়ে বাঙালিকেও নাড়া দিয়েছে একাধিক ঘটনা। কোনওটায় গর্বিত হয়েছে বাঙালি, কোনওটায় আবার স্তম্ভিত হয়েছে, শিউরে উঠেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিয়োগ যন্ত্রণাও। আসুন দেখে নেওয়া যাক ২০১৯-এ বাঙালির মননে ছাপ ফেলে দেওয়া ঘটনাগুলির বাছাই একাদশ—

অমর্ত্যর পর অভিজিৎ

গত ১৪ অক্টোবর বিকেলেই খবরটা এসেছিল। অমর্ত্য সেনের নোবেল পাওয়ার দু’দশক পর ফের কোনও বাংলার কৃতী সেই পুরস্কার পেলেন। সেই অর্থনীতিতেই। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৮৩ সালে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন তিনি। একইসঙ্গে নোবেল পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলোও।

ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়

ভারতরত্নের তালিকায় এবছরই নাম উঠেছে আরও এক বাঙালির। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবার সেই পুরস্কার পেয়েছেন। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের আমলে প্রণববাবুকে পদ্মবিভূষণ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল। সেরা সাংসদের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এর আগে আটের দশকে প্রণববাবু সেরা অর্থমন্ত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতরত্ন তো ভারতরত্নই। দেশের সেরা অসামরিক সম্মান। প্রণববাবুর রাজনৈতিক জীবন এবং প্রকৃত রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তাঁর অবদানের জন্যই তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়।

মসনদে মহারাজ

যেদিন বিকেলে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল পাওয়ার খবর এসেছিল, সেদিন রাতেই আরও একটি খবর আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল বাঙালির মনে। সিএবি সভাপতি থেকে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার সর্বোচ্চ আসনে দাদা। বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে বিসিসিআই সভাপতির চেয়ার। জগমোহন ডালমিয়ার পরে ফের বাংলার কোনও ক্রিকেট প্রশাসক ওই পদে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিসিসিআই সভাপতি হওয়া বাঙালির কাছে ২০১৯-এর অন্যতম সেরা ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। জল্পনা ছিলই। কিন্তু তাতে তৈরি হয়েছিল রোমহর্ষক উত্তেজনাও। ক্রিকেট রাজনীতির পাশা খেলায় ব্রিজেশ পটেল ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলেন বোর্ড সভাপতি হওয়ার দৌড়ে। এমনকি ১৪ অক্টোবর সন্ধেবেলা সৌরভ এসএমএস করে ব্রিজেশকে শুভেচ্ছাও জানিয়ে দেন। কিন্তু তারপরই খেলা ঘুরে যায়। যাকে বলে ওস্তাদের মার শেষ রাতে। বোর্ড সভাপতি নির্বাচনের টানটান ম্যাচে কমেন্ট্রি বক্সে বসলে জিওফ্রে বয়কট হয়তো বলতেন— “এগেইন স্টেপ আউট। এগেইন আ বিগ বিগ বিগ সিক্সার। দ্য প্রিন্স অফ ক্যালকাটা।”

সোনায় মোড়া মেয়ে

ট্র্যাকে ঝড় তুলে ১৫ দিনের মধ্যে চারটি সোনা জিতেছিলেন অ্যাথলিট হিমা দাস। চেক প্রজাতন্ত্রের টাবোর অ্যাথলেটিক্স মিটে নিজের সব ইভেন্টে সোনা জেতেন ‘টিং এক্সপ্রেস।’ ২ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই—১৫দিনে চারটি মেডেল জেতেন হিমা। অসমের মেয়ে হলেও আদ্যপান্ত বাঙালি অ্যাথলিট এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের জন্য।

শূন্য ভালবাসার বারান্দা

গত ৭ নভেম্বর প্রয়াত হন সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন।  হিন্দুস্তান পার্কের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সাহিত্যেকে সমৃদ্ধ করেছেন নবনীতা। পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি ও পদ্মশ্রী-সহ নানা পুরস্কার। বাবা ছিলেন কবি নরেন্দ্র দেব। মা কবি রাধারানী দেবী। হিন্দুস্থান পার্কে তাঁদের ‘ভালবাসা’ বাড়িতেই ১৯৩৮ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম নবনীতার। কবি দম্পতির স্নেহচ্ছায়া আর আদ্যোপান্ত সাহিত্য আর সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হওয়া। গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলে পড়াশোনা শুরু। গ্রাজুয়েট হয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। ১৯৫৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন নিয়ে আবার এমএ পাশ করেন সাহিত্যের এই কৃতী ছাত্রী। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পোস্ট ডক্টরেট ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

চুরমার বিদ্যাসাগর

লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ২০১৯-এ বাঙালির কাছে অন্যতম লজ্জাজনক ঘটনা বলেই মত অনেকের। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় উত্তর কলকাতায়। কলেজস্ট্রিট থেকে বিধান সরণি পর্যন্ত তাণ্ডব চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। তারপর বিধ্যাসাগর কলেজে ঢুকে ঈশ্বরচন্দ্রের মর্মর মূর্তিকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়। তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর তুঙ্গে ওঠে। তৃণমূল, বিজেপি পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপায়। কিন্তু সবকিছুর ঊর্দ্ধে উঠে মূর্তি ভাঙা ২০১৯ সালে বাংলার সবথেকে লজ্জাজনক ঘটনা।

মর্মান্তিক মেট্রো সফর

গত ১৩ জুলাই কলকাতা মেট্রোয় সজল কাঞ্জিলাল নামের এক ব্যাক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বাংলা। মেট্রোর দরজায় হাত আটকে থাকা অবস্থায় চলতে শুরু করে ট্রেন। হাত ভিতরে আটকে থাকায় গোটা শরীর তখন বাইরে। আর তার ফলেই পার্ক স্ট্রিট থেকে ময়দান গামী মেট্রো স্টেশনের মধ্যে মৃত্যু হয় অ্যাকাডেমি চত্বরের পরিচিত মুখ সজলবাবুর। প্রশ্ন উঠে যায় যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে। পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তর সমালোচনা শুরু হয়। মেট্রো রেল নিয়ে কলকাতার অনেক গর্ব। সেদিন সব ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

রক্তের ছাপ জিয়াগঞ্জে

দুর্গাপুজোর দশমীর সকালে শিউরে উঠেছিল বাংলা। খুন হয়েছিলেন একই পরিবারের তিনজন। জিয়াগঞ্জের একটি বাড়ি থেকে শিক্ষক বন্ধু প্রকাশ পাল (৩৫), স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) এবং ছেলে অঙ্গন পালের (৮) রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন ওই মহিলা। মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার রক্তমাখা হয়েছে ধারালো অস্ত্রও। গলার নলি কেটে তিনজনকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনাতেও রাজনৈতিক চাপানউতোর কম হয়নি। আরএসএস দাবি করে, নিহত শিক্ষক তাদের কর্মী ছিলেন। জিয়াগঞ্জ থানার কানাইগঞ্জ লেবুবাগান এলাকার ওই ঘটনা চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল রাজ্যে।

বৌবাজারে বিপর্যয়

গত সেপ্টেম্বর মাসে ভূগর্ভস্থ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজের জেরে বৌবাজারের একাধিক বাড়ি-বহুতলে ফাটল ধরে। বিপর্যয় নেমে আসে বৌবাজার এলাকায়। একের পর এক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের উঠে যেতে হয় হোটেল বা অন্যত্র। ২৭টি বাড়ি নতুন করে বানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মেট্রো কর্তৃপক্ষ। হস্তক্ষেপ করে রাজ্য সরকারও। গঠিত হয় কমিটি। কার্যত কয়েকশো মানুষ সর্বস্ব হারান ওই বিপর্যয়ে।

ডাক্তার বিদ্রোহ

রোগীর আত্মীয়দের হাতে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের মার খাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল রাজ্য। চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় কার্যত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। এনআরএসের বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা রাজ্যে। কার্যত দশদিন ধরে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা শিকেয় ওঠে। পরে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর জট কাটে।

স্টেশন থেকে স্টুডিও

২০১৯ সালের সব থেকে সেনসেশনাল বাঙালি। রাণাঘাট প্ল্যাটফর্ম থেকে হিমেশ রেশমিয়ার স্টুডিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রানু মণ্ডল। যাঁকে নিয়ে মুখ খুলেছেন সঙ্গেএত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরও। কেউ বিদ্রুপ করেছেন, কেউ তাঁর উত্থানকে কুর্নিস জানিয়েছেন। কখনও আবার নিজেই বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে এসেছেন। উনিশের একটা বড় সময় জুড়ে বাঙালির সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং থেকেছেন রানু। এই দশকে সোশ্যাল মিডিয়া কতটা শক্তিশালী সেটাও দেখিয়েছে রানুর উত্থান।

0 Response to "দাদা-নোবেল-রানু, অনেক পাওয়ার উনিশ অনেক লজ্জারও | বঙ্গ প্রতিদিন"

Post a Comment

Article Top Ads

Central Ads Article 1

Middle Ads Article 2

Article Bottom Ads