
প্রাণঘাতী এই ব্যাকটেরিয়ারা বিপদ বুঝলেই ‘চিৎকার’ করে, বার্তা পাঠায় পরিবারকে, তাজ্জব বিজ্ঞানীরা | বঙ্গ প্রতিদিন
সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা (Pseudomonas aeruginosa)। ব্যাকটেরিয়া সমাজে এদেরকে সবচেয়ে খতরনাক তকমা দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। দণ্ডাকার, গ্রাম-নেগেটিভ এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরের একাধিক রোগের জন্য দায়ী। অন্ত্রে বাসা বাঁধে এরা। ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। ফুসফুসের সংক্রমণ থেকে জ্বালাপোড়া রোগ, সেপসিসের মতো মারণব্যাধির জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরাই দায়ী। জলে, স্থলে যে কোনও জায়গাতেই এদের অবাধ বিচরণ। খাবারের মাধ্যমে, পশুপাখির শরীর থেকে মানুষের শরীরে আস্তানা তৈরি করে। তারপরেই শুরু হয় আস্ফালণ।
এই সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসাদের মধ্যেই এমন বার্তা পাঠানোর বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। বিজ্ঞানী নিনা মোলিন বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যাকটেরিয়াবিনাশী ভাইরাস ব্যাকটেরিওফাজ দেখলেই এরা নিজেদের মধ্যে ‘চ্যাট’ করতে শুরু করে। পরিবারের সদস্যরা দূরে থাকলে জোরালো বার্তা (Signal)পাঠায়। ঠিক শিকারিদের মতোই অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যাকটিরিওফাজদের ঘিরে শৃঙ্খল তৈরি করে। চিৎকার করতে করতেই আক্রমণ করে নিজেদের শত্রুদের। অ্যান্টিবায়োটিকের শক্তি পরখ করতেও পারে এই ব্যাকটেরিয়ারা। কোনওভাবে যদি এরা বোঝে শত্রু অনেক বেশি শক্তিশালী, তাহলে বার্তা পাঠিয়ে নিজেদের প্রজাতিদের ডেকে আনে। দলবদ্ধভাবে হামলা চালায়।
মানব শরীরে সংসার পেতেছে সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা
সেপসিস সৃষ্টিকারী এই ব্যাকটেরিয়াদের কাবু করতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেন এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসাদের দমন করতে গেলে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। অনেক সময়েই দেখা যায় সঠিক ওষুধ দেওয়ার পরেও রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। তার কারণই হল ব্যাকটেরিয়াদের এমন আক্রমণী শক্তি। সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসাদের স্বভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

বার্তা পেয়ে একজোট হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ারা
ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্স বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসারা কম অক্সিজেনযুক্ত জায়গায় জন্মায়। প্যাকেটজাত খাবার বেশিদিন খেলে শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে পারে। বাসি খাবার, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার খেলে এরা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পশুদের শরীর থেকেও এরা হানা দেয় মানুষের শরীরে। কিডনি, ফুসফুস, অন্ত্র, মূত্রথলিতে সংক্রমণ ঘটায়। প্রদাহজনিত রোগ তৈরি করে। অনেক সময়ে দেখা গেছে এই ব্যাকটেরিয়ার হানায় তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন রোগী, অথবা সিস্টিক ফাইব্রোসিস থেকে ফুসফুসের সংক্রণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
সেপসিসের জন্যও দায়ী এই সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসা। রক্ত দূষিত করে দেয় এরা। রক্তপ্রবাহে বাহিত হয়ে সরাসরি আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে। একধাক্কায় কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। গবেষণা বলছে সেপসিস সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়লেও বাঁচার সম্ভাবনা থাকে ৮০ শতাংশ। কারণ এই ব্যাকটেরিয়ারা দ্রুত বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সেপসিসে। এই রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম কোমায় রাখতে হয়। জ্ঞান ফিরলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীরা ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’-এ ভুগছেন। যার ফল পেশী ও স্নায়ুর দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস।
সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসাদের আস্ফালন কমাতে কী ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক দরকার তার পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা দেখেন কীভাবে বার্তা পাঠিয়ে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তোলে এই ব্যাকটেরিয়ারা। তাই এদের দমন করতে গেলে আগে সিগন্যাল পাঠানোর রাস্তাকে বন্ধ করে দিতে হবে। এমনভাবে প্রাচীর তুলে ঘিরে দিতে হবে এই ব্যাকটেরিয়াদের যাতে তারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালাতে না পারে। তারপর আলাদা আলাদা করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মোক্ষম ঘা বসাতে হবে
0 Response to "প্রাণঘাতী এই ব্যাকটেরিয়ারা বিপদ বুঝলেই ‘চিৎকার’ করে, বার্তা পাঠায় পরিবারকে, তাজ্জব বিজ্ঞানীরা | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment