অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিয়ে নির্মলা সীতারমন কী বলছেন সাংবাদিক বৈঠকে | বঙ্গ প্রতিদিন
Wednesday, May 13, 2020
Comment
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল:-
শিল্পমহল, বণিকসভা ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থমন্ত্রক একটি সার্বিক অর্থনৈতিক প্যাকেজ তৈরি করেছে।
দেশকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়াই সরকারের লক্ষ্য।
এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’। পাঁচটি স্তম্ভের উপর আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হবে– অর্থনীতি, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি নির্ভর সিস্টেম, জনসংখ্যা এবং চাহিদা।
মূল অগ্রাধিকার থাকবে উৎপাদন বাড়ানোর উপর। তাই জোর দেওয়া হবে চারটি ‘L’-এ। ল্যান্ড অর্থাৎ জমি, লেবর অর্থাৎ শ্রম, লিক্যুইডিটি অর্থাৎ বাজারে অর্থের যোগান এবং ল তথা আইন।
লোকাল ব্র্যান্ডকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড করে তুলতে হবে। সে জন্য তাদের উৎসাহ দেওয়া হবে।
গ্লোবাল ভ্যালু চেইন ও সাপ্লাই চেইন এই উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানায় গত ৬ বছরে অনেক আর্থিক সংস্কারের কাজ হয়েছে, যেমন জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, সরাসরি নগদ হস্তান্তর করা হয়েছে উপভোক্তাদের। আগামী দিনে আরও সাহসী ও দৃঢ় সংস্কারের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা হবে।
আজ থেকে শুরু করে আগামী কয়েক দিন ধারাবাহিক ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করব আমি। প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছেন, তার উপকরণগুলি বিশদে ব্যাখ্যা করব।
১৮ হাজার কোটি টাকা আয়কর রিভান্ড দেওয়া হয়েছে। যাঁদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রিভান্ড পাওনা ছিল, তাঁরা টাকা পেয়ে গেছেন। ১৪ লক্ষ করদাতা উপকৃত হয়েছেন।
ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্পের জন্য আজ ৬টি পদক্ষেপ ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নিয়ে ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া কর ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু ঘোষণা করা হবে আজ।
কোনও রকম বন্ধক ছাড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে ঋণ দেওয়া হবে। ৩ লক্ষ কোটি টাকার তহবিলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনও গ্যারান্টি, কোনও কোল্ল্যাটারাল দিতে হবে না। গৃহ উদ্যোগও এই সুবিধা পাবে।
চার বছরের জন্য এই ঋণ দেওয়া হবে। প্রথম এক বছর আসল শোধ করতে হবে না।
এ ছাড়া সাবর্ডিনেট ডেট তথা ঋণ দেওয়া হবে। যে সব ছোট ও মাঝারি শিল্পে অর্থ সংকট রয়েছে যারা ব্যাঙ্কের টাকা শোধ করতে পারছে না, তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।
যে সব ছোট ও মাঝারি শিল্প সক্ষম, যারা ব্যবসায়িক ভাবে সফল, কিন্তু কোভিডের কারণে আক্রান্ত বা সমস্যায় পড়েছে, তাদের জন্য একটি তহবিল তৈরি করা হচ্ছে। এই ফান্ডস অব ফান্ডের মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকা ইক্যুইটিতে ঢালা হবে। এর মধ্যে থাকবে মাদার ফান্ড এবং কিছু ডটার ফান্ড।
মাইক্রো, স্মল, মিডিয়াম উদ্যোগ তথা এমএসএমই-র সংজ্ঞা বদল করা হচ্ছে।
নতুন সংজ্ঞায় ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে ক্ষুদ্র শিল্প বা উদ্যোগ বলে বিবেচনা করা হবে। ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে তা ছোট শিল্প বা উদ্যোগ বলে বিবেচিত হবে। ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে তা মাঝারি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হবে।
২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি কেনাকাটায় গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা যাবে না। ঘরোয়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকে সেই সুযোগ দিতে হবে।
আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ সহায়ক হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
লোকালের জন্য ভোকাল হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেছিলেন, সেই উদ্দেশেই এই পদক্ষেপ।
কোভিড উত্তর সময়ে কোনও বাণিজ্য মেলা, এক্সিবিশন হয়তো হবে না। তাই ই-মার্কেট লিংকেজের জন্য সরকার চেষ্টা করবে।
সরকার থেকে বা কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে যদি কোনও ক্ষুদ্র, ছোট বা মাঝারি শিল্পের বকেয়া পাওনা থাকে তা আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হবে।
লিক্যুইডিটি রিলিফ দেওয়া হবে সব প্রতিষ্ঠানকে যারা ইপিএফ-এর সদস্য। জুন, জুলাই, অগস্ট মাসে কর্মচারীদের এবং নিয়োগকারীদের অংশের চাঁদা (মাইনের ১২ শতাংশ) সরকার দিয়ে দেবে। ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে এই তহবিলে।
এর আগে তিন মাসের জন্য এই সুবিধা সরকার দিয়েছে। তা আরও তিন মাস প্রসারিত করা হল। ৭২ লক্ষ কর্মচারী এর ফলে উপকৃত হবেন।
বিধিবদ্ধ পিএফ কন্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে নিয়োগকারীদের প্রভিডেন্ট খাতে যে ১২ শতাংশ চাঁদা দিয়ে হয়, তার পরিবর্তে আগামী তিন মাস ১০ শতাংশ দিলেই হবে। তার ফলে প্রতিষ্ঠানের হাতে আরও অর্থের যোগান থাকবে।
৩০ হাজার কোটি টাকা লিক্যুইডিটি ঘোষণা করা হচ্ছে এনবিএফসি, হাউজিং ফিনান্স কোম্পানি, মাইক্রো ফিনান্স ইনস্টিটিউট গুলির জন্য। যাদের অর্থের সংকট রয়েছে, তাদের জন্য এই প্রকল্প ঘোষণা করা হল।
নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্স কোম্পানিগুলির জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার লিক্যুইডিটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সরকারি ঠিকাদারদের কাজ শেষ করতে ৬ মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। কারণ, কোভিড সংকটের জন্য তারা কাজ করতে পারেনি। নির্মাণ কাজের ঠিকাদার বা যাঁরা সরকারকে বিভিন্ন জিনিস সরবরাহ করেন তাঁরা এই সুবিধা পাবেন।
শুধু তাই নয়, ঠিকাদাররা কোনও প্রকল্পের নির্দিষ্ট অংশ কাজ ইতিমধ্যে করে ফেললে সেই অনুপাতে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির টাকা তাঁদের ফেরত দেওয়া হবে। যাতে তাঁদের নগদের সংকট না হয়।
পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তথা ডিসকমগুলিকে ৯০ হাজার কোটি টাকা এককালীন অর্থের যোগান দেওয়া হবে। প্রকারান্তরে তার সুবিধা গ্রাহকরাও পাবেন।
রিয়েল এস্টেট সংস্থাগুলিকেও স্বস্তি দেওয়া হচ্ছে। এখন কোনও আবাসন নির্মাণের ক্ষেত্রে রেরা আইন (পশ্চিমবঙ্গে বলা হয় হিরা) মেনে চলতে হয়। অর্থাৎ ক্রেতাদের ঠিক সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করতে হয়। কিন্তু কোভিডের কারণে যে হেতু কাজ বন্ধ ছিল। তাই টাইমলাইন ৬ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
নন স্যালারিড পার্সন, অর্থাৎ যাঁরা নির্দিষ্ট বেতন কোনও সংস্থা থেকে পান না, সেই সব ক্ষেত্রে উৎস মূলে কর কেটে নেওয়ার হার ২৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে। চুক্তি বাবদ অর্থ, কনসালটেন্সি ফি, ডিভিডেন্ড, কমিশন, ব্রোকারেজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে কর ছাড়ের এই সুবিধা পাওয়া যাবে। কাল বৃহস্পতিবার ১৪ মে থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত এই কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।
প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থায় পদক্ষেপ: ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ৩১ জুলাই এবং ৩১ অক্টোবর থেকে বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর করা হচ্ছে।
সরকার কোথা থেকে ২০ লক্ষ কোটি টাকা অর্থের সংস্থান করবে জানতে চাওয়া হলে নির্মলা সীতারামন বলেন, আর্থিক প্যাকেজ পুরোটা ঘোষণা করে দেওয়ার পর এর স্পষ্ট জবাব দেবে।
0 Response to "অর্থনৈতিক প্যাকেজ নিয়ে নির্মলা সীতারমন কী বলছেন সাংবাদিক বৈঠকে | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment