প্রথম ভ্যাকসিন নিলেন অক্সফোর্ডের এক মহিলা বিজ্ঞানী, আরও ৮০০ জনের উপরে চলবে ট্রায়াল | বঙ্গ প্রতিদিন
Friday, April 24, 2020
 Comment 
বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:-মানব শরীরে কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। প্রথম দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছে ভ্যাকসিন। তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা বিজ্ঞানী। নাম এলিসা গ্রানাটো। আরও ৮০০ জনকে দুটি দলে ভাগ করে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
কন্ট্রোলড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হচ্ছে অক্সফোর্ডে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য বাছাই করা ৮০০ জনের বয়স ১৮ বছর থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। তাঁদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি দলকে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। অন্যদলকে এমন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে যা মেনিনজাইটিসের প্রতিরোধী। এখন কার শরীরে কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেটা আগে থেকে জানানো হবে না।  ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে সকলকেই।
অক্সফোর্ডে প্রথম ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এলিসাকে। তিনি বলেছেন, “আমি নিজেও একজন বিজ্ঞানী। তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে গর্বিত। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে যেমনভাবে দরকার পড়বে আমি সাহায্য করব।”
All official, up-to-date COVID-19 advice for staff, students and visitors is made available on our webpage at bit.ly/coronavirus-ad…. This will be updated as and when we receive new info. Please ensure you refer to this page and continue to follow @PHE_UK and @NHSuk advice.
245 people are talking about this
১০ জানুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক-বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। জেন্নার ইনস্টিটিউট ভাইরোলজি বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ভ্যাকসিন ডিজাইন করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বানানো ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করবে?
কোভিড-১৯ প্রতিরোধী এই ভ্যাকসিনের নাম  ChAdOx1 nCoV-19।  এই গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্ট। তিনি বলেছিলেন, এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে ৮০% শতাংশ কাজ করবে বলেই তিনি আশাবাদী। সংক্রমণও আটকাতে পারবে এই ভ্যাকসিন। জেন্নার ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল বলেছেন, “২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা মহামারী হওয়ার সময় ভ্যাকসিন তৈরির দিশা দেখিয়েছিল অক্সফোর্ড। এবার আরও বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে।”
অক্সফোর্ডের বানানো ভ্যাকসিন হল ভেক্টর ভ্যাকসিন। সারা জানিয়েছেন, অ্যাডেনোভাইরাল ভ্যাকসিন ভেক্টর ও সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে এই ভ্যাকসিন ChAdOx1 nCoV-19 তৈরি করা হয়েছে। ভেক্টর বা বাহকের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সাধারণ ফ্লু ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাসকে (adenovirus) । শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া হয়েছে এই অ্যাডেনোভাইরাস। তারপর একে ল্যাবে এমনভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে যাতে মানুষের শরীরে কোনও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে না পারে।
আরও পড়ুন:দিল্লি আইআইটির আরটি-পিসিআর টেস্ট কিটকে স্বীকৃতি আইসিএমআরের, কম খরচেই নির্ভুলভাবে ধরবে কোভিড সংক্রমণ
কীভাবে বানানো হয়েছে এই ভেক্টর ভ্যাকসিন? সার্স-কভ-২ ভাইরাসের কাঁটার মতো অংশ অর্থাৎ স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনগুলোকে প্রথমে আলাদা করা হয়েছে। এই ভাইরাল প্রোটিন আগে থেকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা অ্যাডেনোভাইরাসের মধ্যে ঢুকিয়ে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। এখন ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করলে এই বাহক ভাইরাস অর্থাৎ অ্যাডেনোভাইরাস করোনার স্পাইক প্রোটিনগুলোকে সঙ্গে করে নিয়েই মানুষের শরীরে ঢুকবে। দেহকোষ তখন এই ভাইরাল প্রোটিনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তার প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। সেই সঙ্গে দেহকোষের টি-সেল (T-Cell)গুলোকে উদ্দীপিত করবে। এই টি-সেল হল শরীরে অন্যতম বড় অস্ত্র। এর কাজ হল বাইরে থেকে আসা যে কোনও সংক্রামক জীবাণুকে খতম করে দেওয়া। একদিকে অ্যান্টিবডি অন্যদিকে টি-সেল, এই দুই অস্ত্রেই ধ্বংস হয়ে যাবে করোনার স্পাইক প্রোটিন।
ভ্যাকসিনের কাজ অবশ্য এখানেই শেষ নয়। এমন ধরনের ভেক্টর ভ্যাকসিনের আরও একটা কাজ হল শরীরকে ক্ষতিকর ভাইরাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে রাখা। অর্থাৎ শরীরকে শিখিয়ে পড়িয়ে রাখা যে ভবিষ্যতে এমন ধরনের ভাইরাস হানা দিলে কীভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে হবে, এবং কীভাবে টি-সেলকে জাগিয়ে তুলতে হবে। শরীর যাতে নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজেই তৈরি করে নিতে পারে।

ভ্যাকসিন কাজ করছে বোঝা যাবে কী করে?
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের ভাইরোলজিস্ট ডক্টর অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেছেন, এই ট্রায়ালের জন্য বেশিরভাগই স্বাস্থ্যকর্মীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। টিমে বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষও রযেছেন। এই ৮০০ জনের উপর ট্রায়া সফল হলে বড়মাপের পরীক্ষার জন্য আরও পাঁচ হাজারের উপর ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা হবে।
গবেষক বলেছেন, ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ আগে ঠিক করা হয়েছে। কিছুদিনের পর থেকেই রেজাল্ট বোঝা যাবে।  এই ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। ভাইরোলজিস্ট অ্যান্ডু পোলার্ড বলেছেন, প্রথম কয়েকদিন সামান্য মাথাব্যথা বা ঝিমুনি হতে পারে, তবে তারপর থেকেই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে সেটা নজরে রাখা হবে। সরাসরি করোনাভাইরাস ইনজেক্ট করেও এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করা যায়, তবে তাতে ঝুঁকি থেকে যায়। গবেষক বলেছেন, এখনই অতটা জটিল প্রক্রিয়া করা হবে না। প্রাথমিকভাবে ট্রায়াল সফল হলেই পরবর্তী ট্রায়ালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


0 Response to "প্রথম ভ্যাকসিন নিলেন অক্সফোর্ডের এক মহিলা বিজ্ঞানী, আরও ৮০০ জনের উপরে চলবে ট্রায়াল | বঙ্গ প্রতিদিন"
Post a Comment