-->
অমিত শাহর চরম আক্রমণ মমতা-তৃণমূলকে, একুশের বদলের ডাক, ‘আর নয় অন্যায়’ | বঙ্গ প্রতিদিন

অমিত শাহর চরম আক্রমণ মমতা-তৃণমূলকে, একুশের বদলের ডাক, ‘আর নয় অন্যায়’ | বঙ্গ প্রতিদিন




বঙ্গ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:- একুশের ফলাফল কী হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু হালফিলে দৃশ্যতই ঝিমিয়ে পড়া বিজেপিকে একুশের জন্য প্রস্তুত করতে রবিবাসরীয় দুপুরে তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চরম রাজনৈতিক আক্রমণ করলেন অমিত শাহ। যে আক্রমণ পুরোদস্তুর কৌশলগত। সে জন্য কখনও দুর্নীতি প্রশ্নে ‘ভাতিজা’ থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের প্রসঙ্গ তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। বাংলার অনুন্নয়ন ও উন্নয়নের প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের অসহযোগিতার কথা জানাতে চাইলেন। আবার কখনও রাম মন্দির নির্মাণের কথা টেনে এনে হাত মুঠো করে ধ্বনি তুললেন, ‘জয় জয় শ্রীরাম’। এবং সে সবের সঙ্গেই বাংলার মানুষকে পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দিতে চাইলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন তথা সিএএ নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বাংলার কোনও মুসলিমের নাগরিকত্ব যাবে না।
উনিশের ভোটে এই বাংলাতেই বিষ্ময়কর ফলাফল হয়েছে বিজেপির। দিদি যখন ৪২টি আসনের মধ্যে ৪২টিই জিতে নেওয়ার প্রত্যয় দেখাচ্ছিলেন, তখন বাংলা থেকে ১৮ টি আসন জিতে নিয়েছিল মোদী-শাহর দল। কিন্তু তার পর থেকে গত সাত-আট মাসে বিজেপির বাড়-বৃদ্ধি বিশেষ দেখা যায়নি। উপনির্বাচনে তিনটি আসনে বিজেপি তো হেরেছেই, সেই সঙ্গে যেন দিশাহীনতা গ্রাস করতে শুরু করেছিল গেরুয়া শিবিরকে। বিশেষ করে তৃণমূল যখন প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোট কৌশলীর পরামর্শ নিয়ে একুশের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে, তখনও বিজেপির ঘর দৃশ্যত অগোছালো। একে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল, বিবাদ, মন কষাকষি, সেই সঙ্গে নেতৃত্বহীনতার জন্য গোটা দলটাই একাদশীর উপোসের মতো তাকিয়ে ছিল দিল্লির দিকে। মোদী-অমিত শাহ কবে বাংলায় আসবেন, কবে একুশে আঘাত হানার মন্ত্র দেবেন।
রবিবার শহিদ মিনারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই কাজটাই করতে চাইলেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
কী করলেন তিনি?
প্রথমত, ঝিমিয়ে পড়া বিজেপি নেতা কর্মীদের বোঝাতে চাইলেন এই বাংলায় তৃণমূল অজেয় নয়। উনিশের ভোটের সময়েও কেউ ভাবতে পারেনি বাংলায় ১৮ টি আসন জিততে পারে বিজেপি। সে সময়ে তৃণমূলের আচরণ ও দম্ভও ছিল আকাশছোঁয়া। বাংলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা করতেও তারা ঠিকমতো দেয়নি। কোথাও মাঠ দেয়নি, কোথাও হেলিকপ্টার নামতে দেয়নি। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর সেই বিজেপিকে কলকাতার বুকে সভা করতে দিতে ওরা এখন বাধ্য হয়েছে।


এরপরই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বারবার দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, দলবাজির প্রসঙ্গ তোলেন প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি। বলেন, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বদলের ডাক দিতে হবে। একুশের লড়াইয়ের জন্য বিজেপির স্লোগানই হবে- আর নয় অন্যায়। পাশাপাশি বাংলায় অনুন্নয়ন ও উন্নয়নের প্রশ্ন তৃণমূল সরকারের অসহযোগিতা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করতে চান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, বামেরা বাংলায় তিন দশক সরকার চালিয়েছে, তাতে বাংলা এগোয়নি। তৃণমূলের দশ বছরে আরও পিছিয়ে পড়েছে বাংলা। রাজ্যের ঋণের বোঝা ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। ৭০ শতাংশ কৃষক ঋণগ্রস্ত। আশি শতাংশ কারখানায় তালা ঝুলছে। আর নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলায় কৃষকদের ৬ হাজার টাকা করে দিতে চাইলে তা দিতে দিচ্ছে না।
প্রাথমিক ভাবে এসব কথা বলার পরই উগ্র মেরুকরণের মন্ত্রও বাংলার গেরুয়া শিবিরের মধ্যে গুঁজে দিতে চান অমিত শাহ। সে জন্য রাম মন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গ তোলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিচারতার বিরুদ্ধে সরব হন, পাশাপাশি তৃণমূলের তুষ্টিকরণের রাজনীতির বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা সমালোচনা করেন। তারপর বলেন, বিজেপিকে এবার বছর সময় দিন, কথা দিচ্ছি ফের সোনার বাংলা করে দেব।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অমিত শাহর কৌশল পরিষ্কার। তিনি ভাল করে জানেন, বাংলায় শুধু ধর্মীয় মেরুকরণে শান দিয়ে ভোটে জেতা যাবে না। তৃণমূলের এক শ্রেণির নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, অনিয়ম, কাটিমানি, সিন্ডিকেট, অনুন্নয়ন, কর্মসংস্থানের অভাব ইত্যাদি নিয়ে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা রয়েছে। সেই ক্ষতের কথা মানুষকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। তার পর বিকল্প উন্নয়নের মডেল দেখাতে হবে। এরই সঙ্গে থাকবে মেরুকরণের মন্ত্রও। বস্তুত লোকসভা ভোটেও বাংলায় বিজেপির ভোট সাফল্যের রসায়ন ছিল মোটামুটিই এই তিন দাওয়াই।
সন্দেহ নেই অমিত শাহর এই আক্রমণের জবাব তৃণমূলও দেবে। দেখা যাক, কী বলেন অমিত মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা।

0 Response to "অমিত শাহর চরম আক্রমণ মমতা-তৃণমূলকে, একুশের বদলের ডাক, ‘আর নয় অন্যায়’ | বঙ্গ প্রতিদিন"

Post a Comment

Article Top Ads

Central Ads Article 1

Middle Ads Article 2

Article Bottom Ads